এসিডের আদ্যোপান্ত

ত্বকচর্চ্চার রুটিনের সাথে ‘অ্যাসিড’ শব্দটি শুনতে অদ্ভুত লাগে না? অথচ জানেন অ্যাসিড আপনার ত্বকের জন্য খুবই ভাল হতে পারে!

অন্যদিকে অসংখ্য অ্যাসিডিক পণ্য, ওয়েবসাইট, সেলিব্রিটিদের কথাবার্তা এবং কোন কোন ক্ষেত্রে খোদ ব্র্যান্ড থেকে আসা অনেক ভুল তথ্য আপনাকে ভুল পথে নিতে পারে। তাহলে কি করা যায়?

সবচাইতে ভাল অ্যাসিড বেছে নেওয়ার উপায় হল আপনি যে ধরনের ত্বকের সমস্যার সমাধান করতে চান, সেটার উপর জোর দেয়া। আরো ভালভাবে বুঝতে হলে বিভিন্ন ধরণের অ্যাসিড সম্পর্কে কিছুটা ধারণা থাকা জরুরী।

বিটা হাইড্রক্সি অ্যাসিড – বিএইচএ (বিএইচএ আছে মাত্র একটি,  স্যালিসিলিক অ্যাসিড): আপনার যদি ছুলি বা ব্রণ থাকে, তাহলে এটা হল সবচে’ ভাল।

আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড – এএইচএ: আপনার ত্বকে যদি বলি রেখা দেখা যায়, তাহলে আপনি এটা বেছে নিতে পারেন।

পলিহাইড্রক্সি অ্যাসিড – পিএইচএ: আপনার ত্বক কি সেনসিটিভ? আর ব্যবহার করতে গিয়ে ত্বক জ্বলবেনা এমন কিছু যদি চান তাহলে এটা আপনার জন্য পার্ফেক্ট।

যাদের মুখে দাগ এবং ছুলি রয়েছে তাদের জন্য স্যালিসিলিক অ্যাসিড খুবই ভাল। এটি ওটিসি প্রোডাক্টে ২%  মাত্রায় পাওয়া যায়। ব্রণ, ব্রণের দাগ, মেলাসমা, সূর্যের আলোর কারণে ক্ষতি এবং বয়সের কারণের দাগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা যায়।

যারা বার্ধক্যের লক্ষণ নিয়ে চিন্তিত তাদের জন্য গ্লাইকোলিক অ্যাসিড (এএইচএ) ভাল হবে। ব্রণ, কালো দাগ, এমনকি ত্বকের টোন এবং টেক্সচার প্রতিরোধে সহায়তা করে। গ্লাইকোলিক অ্যাসিড সূর্যের আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা বাড়ায়, তাই সূর্যের আলোতে ক্ষতি রোধ করতে গ্লাইকোলিক অ্যাসিড ব্যবহার করার সময় সানস্ক্রিন ব্যবহার করবেন অবশ্যই।

যদি আপনার সমস্যা অনুজ্জ্বল, ডিহাইড্রেটেড বা শুষ্ক ত্বক হয়, তবে আপনার লাগবে ল্যাকটিক অ্যাসিড (এএইচএ)। এটা ত্বকের জন্য কোমল অথচ ভীষণ সংবেদনশীলভাবে ত্বককে এক্সফোলিয়েট করার কাজ করে।

ম্যান্ডেলিক অ্যাসিড (এএইচএ) গ্লাইকোলিক অ্যাসিডের মতই এবং ব্রণ, এমনকি পিগমেন্টেশন প্রতিরোধ করতেও ব্যবহার করা যেতে পারে। এটা তৈলাক্ত ত্বকের জন্যও ভাল একটা জিনিস। এটি গ্লাইকোলিক অ্যাসিডের মতো ত্বকের গভীরে ঢোকেনা, ফলে জ্বলুনি কম হয়। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক শুকিয়ে না দিয়েই তৈলাক্ততা কমাতে পারে।

আপনার যদি সেনসিটিভ ত্বক থাকে তাহলে আপনি পিএইচএ ব্যবহার করতে পারেন। এটি মূলত একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ফ্রি রেডিকেলগুলোকে আক্রমণ করে, ত্বককে সূর্যের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে । সময়ের সাথে সাথে, পিএইচএ লালচেভাব কমায় এবং স্কিনের নমনীয়তা ধরে রাখতেও সাহায্য করে।

লিখেছেন-

MBBS, MSc, PGT (Dermatology)

Dr Ishrat Nazneen Metee

হাইপারপিগমেন্টেশন- ত্বকের কালো দাগ

ত্বকের খুব সাধারণ সমস্যা হচ্ছে হাইপারপিগমেন্টেশন। কিন্তু এটা কী? আর কিভাবে আপনি এর চিকিৎসা করবেন? জানতে হলে পড়ুন।

হাইপারপিগমেন্টেশন বলতে বোঝায় ত্বকে ছোপ ছোপ দাগ যা স্বাভাবিক রঙ এর চেয়ে কিছুটা গাঢ় হয়। এমনটা হয় যখন বেশী মেলানিন (আপনার ত্বকের রং হয় যে পিগমেন্টে) সৃষ্টি হয়। নানান রকমের হাইপারপিগমেন্টেশন রয়েছে আর এর কারণ বয়সভেদে, সূর্যে তাপে, হরমোনের পরিবর্তনে আর ত্বকের আঘাতের কারণে ভিন্ন ভিন্ন হয়।

এসপিএফ- মূল রক্ষাকর্তা

আপনার হাইপারপিগমেন্টেশনের জন্য দায়ী যা-ই হোক না কেন, এসপিএফকে বাদ দেয়া যাবে না। এটা হাইপারপিগমেন্টেশন প্রতিরোধ এবং আরও খারাপ হওয়া থেকে রক্ষা করবে। আপনাকে রোজ কমপক্ষে এসপিএফ৫০ ব্যবহার করতে হবে এবং দুই ঘন্টা পরপর  মেখে নিতে হবে। বিশেষ করে অনেক ক্ষণ সূর্যের নীচে থাকলে। আর আপনার যদি মনে হয় যে আপনার মেসতা আছে, তাহলে সানস্ক্রিনের পাশাপাশি একটা বড় টুপি কিংবা ছাতা রিকমেন্ডেড।

 ত্বকের সমস্যার সমাধানে

সানবার্ন অথবা কেমিক্যাল বার্ন থেকে হাইপারপিগমেন্টেশন হতে পারে। তা যেন না হয় সেজন্য আপনাকে ত্বকের যত্ন নিতে হবে, বিশেষ করে আপনার যদি পিগমেন্টেশনের সমস্যা থাকে। আপনার ত্বক যেন শুষ্ক না হয় সেটা খেয়াল রাখুন, খসখসে, শুষ্ক করে দেয় এমন প্রোডাক্ট ব্যবহার করবেন না। তবে লক্ষ্য রাখবেন যেন বেশী বেশী হাই স্ট্রেংথ এক্টিভস আর এক্সফোলিয়েন্ট ব্যবহার না করা হয়।

দৈনিক ব্যবহার করার মত প্রোডাক্টের পিছনে খরচ করা

আপনার রুটিনে এমন একটা সিরাম রাখুন যাতে টাইরোসিনাজ ইনহিবিটর্স আছে। টাইরোসিনাজ একটি এনজাইম, যা মেলানিন তৈরিতে প্রয়োজন হয়। আর এই উপাদানগুলো  হাইপারপিগমেন্টেশন সৃষ্টি হওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। লেবেলের ফর্মুলায় এই উপাদানগুলো আছে কিনা দেখুনঃ যষ্টিমধু এক্সট্রাক্ট, কোজিক এসিড, ট্রানএক্সামিক এসিড, আলফা আরবুটিন, আজেলিক এসিড, নিয়াসিনামাইড ও হাইড্রোকুইনোন।

আপনার যদি পোস্ট-ইনফ্লেমেটরি হাইপারপিগমেন্টেশন হয় (পিগমেন্টেশন  থেকে যায় ত্বকের একনি বা কোন ক্ষতির কারণে), তাহলে সেই জায়গাগুলো খোঁটা বা চাপা ঠিক হবেনা। এর ফলে সেরে ওঠা  ব্যহত করে সমস্যা জটিল করে তুলবে, ত্বকের রং নষ্ট করে।

আপনার রুটিনে গ্লাইকোলিক এসিডের মত এক্সফোলিয়েটিং এক্টিভস রাখলে ত্বকের উপর থেকে পিগমেন্টেশন দ্রুত মিলিয়ে যাবে। রেটিনল সেরাম যদি রাখেন রুটিনে, তাহলে ত্বকের সেল এর টার্নওভার বাড়বে।

ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া

হাইপারপিগমেন্টেশনের চিকিৎসায় ফল দেয় রাসায়নিক পিল, মাইক্রো-নিডলিং, আইপিএল আর লেজার। আপনি কোনটি বাছবেন তা নির্ভর করে আপনার ত্বকের টোন কেমন আর পিগমেন্টেশন কত গভীর। তাই সবচাইতে ভাল হয় যদি আপনি কোন চর্ম বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেন।

আশা-নিরাশা

হাইপারপিগমেন্টেশনের চিকিৎসা সময় সাপেক্ষ এবং এর ধারাবাহিকতা থাকতে হয়। যেকোন প্রসাধনী কিংবা ওষুধ কাজ করতে ৩মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত সময় নিতে পারে, তাই ধৈর্য ধরে নিয়মিত রুটিন ফলো করা অত্যন্ত জরুরী।

লিখেছেন-

MBBS, MSc, PGT (Dermatology)

Dr Ishrat Nazneen Metee

ক্লাস্টার ফিডিং- যেকথা প্রায় কেউ ই জানেনা!

ক্লাস্টার ফিডিং এর জন্য গুগল এ ছবি ঘেটে কোন বিদ্ধস্ত মায়ের ছবি পেলাম না। ছবির মায়ের কান্নাকান্না চেহারা দেখে এই ছবিটা নিলাম, আজকের টপিক এর সাথে কিছুটা রিলেভেন্ট বলে। ক্লাস্টার ফিড করাচ্ছে এমন মায়ের চুল হবে কারেন্ট এর শক লাগলে যেমন চুল দাড়ায়ে থাকে, ওরকম আর কান দিয়ে ধোয়া বের হচ্ছে, এরকম। এই জিনিস যার সাথে হয়নাই, তার নিজের বাদে আর কারো পক্ষে বোঝা সম্ভব না, কি অমানুষিক কষ্ট আর জিনি জানেন না, তার জন্য কত টেনশন এর ব্যপার।

বিকাল ৩টা/৪টা থেকে রাত ৯.৩০টা পর্যন্ত টানা ব্রেস্ট ফিডিং যে কি পরিমান এনার্জি ড্রেইনিং, সেটা লিখে বুঝানোর মত ক্ষমতা আমার নাই।

যদি আপনার বাবু অল্প সময়ের মধ্যে ঘন ঘন ব্রেস্টফিড করতে চায়। ফিডিং এর পর ও স্যটিস্ফাইড না হয়ে ইরিটেটেড হয়ে কান্না করা/ অস্থির হয়ে যেতে থাকে এবং ৪-৫ ঘন্টা পর্যন্ত এই অবস্থায় থাকে, এরকম ফিডিং কে ক্লাস্টার ফিডিং বলা যেতে পারে। এরকম অবস্থায় বাবুর মা নিজেই চিন্তায় পড়ে যান, মিল্ক-সাপ্লাই ঠিক মত হচ্ছে কিনা, বাবুর কোনো রকম অসুস্থতা বা সমস্যা হচ্ছে কিনা। ঘাবড়ে যাবার মতো এটি কোনো বিষয় তো না ই বরঞ্চ, এটা খুব স্বাভাবিক একটি ঘটনা।

কেন বাবু ক্লাস্টার ফিডিং করে?
প্রথম ৩-৬ সপ্তাহের বাবুদের মাঝে (আমার জন ৫ দিন বয়সেও করসিল) ক্লাস্টার ফিডিং এর প্রবণতা অনেক বেশি দেখা যায়। ঘন ঘন খাবার ইচ্ছা প্রকাশ করা খুবই পজিটিভ সাইন। বেশীরভাগ সময় বিকাল বা সন্ধ্যার দিকে বাবু ক্লাস্টার ফিড করতে পারে, এর একটা কারণ হতে পারে যে একটা লম্বা ঘুমের জন্য সে নিজেকে প্রস্তুত করছে।তবে মূল কারণটা হচ্ছে, ৬ মাসের মধ্যে নিউবর্ন বাবুরা অনেকগুলো ডেভেলাপমেন্ট মাইলস্টোন অতিক্রম করে। তার নিজের গ্রোথের প্রয়োজনেই সে একটু একটু পর খাওয়ার ইচ্ছা পোষন করে কান্না করা, ব্রেস্টের আশেপাশে মুখ নিয়ে যাওয়া, ঠোট গোল করে ফেলা বা অস্থিরতা প্রকাশ করবে। ঘন ঘন খেতে চাওয়ার মানে এটা না যে সে যথেষ্ট দুধ পাচ্ছেনা, বা যিনি ব্রেস্টফিড করাচ্ছেন তার নার্সিং এ কোনো সমস্যা। উল্টো ঘন ঘন ব্রেস্ট ফিড করালে মিল্ক-সাপ্লাই বেড়ে যাবার কথা।
এ সময়ে করণীয়
লম্বা সময় ধরে বাবুকে ব্রেস্টফিড করানো একজন মাকে ক্লান্ত করে ফেলতে পারে। এজন্য প্রথমে নিজে রিলাক্স থেকে বাবুকে ফিড করাতে পারেন। এসময় বই পড়তে পারেন বা গান শুনতে পারেন। কিছু সময় পরপর পজিশন বদলাতে পারেন। বাবুকে ৩০ ডিগ্রি পজিশন এ শুইয়ে নিজেও শুয়ে খাওয়াতে পারেন কিছু সময়। সবচেয়ে বড় কথা টেনশন বাদ দিয়ে রিল্যাক্স থেকে ফিডিং এনশিওর করা।
-কেয়ারগিভাররা ব্রেস্টফিড করানো মায়ের কাছে পানি, খাবার দাবার দিতে পারেন।যাতে লম্বা সময় নার্সিং এ মায়ের অসুবিধা না হয়।
  • বাবু অতিরিক্ত কান্না করলে ,অস্থির হয়ে থাকলে তাকে শান্ত করার চেষ্টা করুন। নার্সিং এর সময় ঘুমপাড়ানি গান,হালকা দুলুনি, নিভু নিভু আলো, আরামদায়ক রুম টেম্পারেচার বাচ্চাকে শান্ত করতে সাহায্য করে।
  • দুশ্চিন্তায় পড়ে ফর্মূলা মিল্ক না দিয়ে ব্রেস্ট মিল্ক পাম্প করে সেটাই ফিডারে দিতে পারেন। তবে এক্সক্লুসিভ ব্রেস্টফিডিং বাবুর জন্য বেশী ভালো।
  • প্রতি মাসে বাবুর উচ্চতা এবং ওজন মেপে খেয়াল রাখুন তার বয়স অনুযায়ী ওজন এবং উচ্চতা ঠিক আছে কিনা। ডাক্তার রা বলেন ৬ মাসে জন্মের সময়ের ওজন এর ডাবল হলেই ওজন ঠিক মত বাড়ছে। চিন্তার কোন কারণ নেই। দৈনিক ৬বার প্রসাব করলেই বুঝা যাবে বাচ্চা ঠিক মত দুধ পাচ্ছে।
আজ তাহলে এটুকুই। কারো কোন প্রশ্ন বা সাজেশন অবশ্যই কমেন্ট এ জানাবেন। আপনার কোন বন্ধুর যদি নিউবর্ন থাকে বা আসবে, তাদের ট্যাগ করতে পারেন, উপকার হবে তাঁদের।

লিখেছেন-

MBBS, MSc, PGT (Dermatology)

Dr Ishrat Nazneen Metee

হবু মায়ের হসপিটাল ব্যাগ চেকলিস্ট

প্রেগন্যান্সির ৩৫-৪০ সপ্তাহ খুবই অনিশ্চয়তায় ভরা একটা সময়। কারো ক্ষেত্রে দেখা যায় এক্সপেক্টিং ডিউ ডেট পার হয়ে যাবার পর বাবুর ডেলিভারি হয়েছে (আমার যেমন ৪১ সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল), কারো ক্ষেত্রে ৩৬/৩৭ সপ্তাহেই বেবিকে পেয়ে গেছেন। আমি বলব ৩৫ সপ্তাহ থেকেই ডেলিভারির জন্য মানসিক এবং শারীরিক প্রস্তুতি নেয়া শুরু করা দরকার, কারণ বাবু যেকোন সময় পৃথিবীতে চলে আসতে পারে।
বাবুর জন্য কাপড়চোপড় ও জরুরি জিনিস কেনা, ব্লাড ডোনার খুঁজে রাখা,হাসপাতাল ঠিক করে নেয়া এসব কিছুর সাথে হাসপাতালের ব্যাগ টা গোছাতে ভুলবেন না। মনে হতে পারে যাওয়ার আগে ব্যাগ গুছিয়ে নিলেই চলবে, তবে হুট করে ব্যাথা উঠলে তাড়াহুড়ো করে আসলে জরুরি অনেক জিনিস বাদ পড়ে যেতে পারে।আর একবার হসপিটালে গেলে কমপক্ষে ২৪ ঘন্টা বাবু এবং মা দুজনের ই থাকতে হতে পারে, সি-সেকশন হলে ২-৪ দিন (অনেক ক্ষেত্রে আরো বেশি)।
তো আজকের পোস্ট এ চেষ্টা করেছি হাসপাতালের ব্যাগে যা যা লাগতে পারে সব একটি চেকলিস্ট আকারে লিখতে। যাতে ব্যাগ গোছানোর সময় দরকারি জিনিস লিস্ট দেখে নিতে পারেন, আর জরুরি কিছু বাদ না পড়ে।
মায়ের জন্য
  • সব রিপোর্ট একটা ফাইলে নিয়ে নিবেন।
  • স্যানিটারি ন্যাপকিন/ এডাল্ট ডায়াপার। 
  • নার্সিং ব্রা যদি সার্বক্ষনিক ব্রা পরার অভ্যাস থাকে।
  • ম্যাক্সি সামনে খোলা ৪-৫টা।
  • পেটিকোট।
  • চাদর/শাল/বড় নরম ওড়না।
  • স্যান্ডেল।
  • নিপল ক্রিম ( ঘন ঘন ব্রেস্টফিড করালে নিপল ক্র্যাক হবেই, এটা অবশ্যই সাথে রাখবেন) 
  • স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টস (টুথব্রাশ, পেস্ট, ফেসওয়াশ , ময়শ্চারাইজার, টামি বাটার, ভ্যাসলিন) 
  • টাওয়াল।
  • ইলেকট্রিক কেটলি ।
  • চিরুনি, হেয়ার ব্যান্ড।
  • মোবাইল চার্জার।
  • মগ , প্লেট, ছোট ছুরি (ফল যদি খান), পাঁচ লিটার পানির গ্যালন।
  • এবডোমিনাল পোস্ট প্রেগন্যান্সি বেল্ট (এটা অনেক হাসপাতাল থেকেই দেয় আর কিনে হাসপাতালে নেয়ার দরকার নেই। বাসায় ফেরার পর কিনলেও হয়। অনেকে মনে করেন এই বেল্ট ব্যবহারে পেট কমে। এটা সম্পুর্ন ভুল ধারনা। সিজার হলে আমাদের পেটের মাসল তখন লুজ থাকে (মাসল এ কোন সেলাই দেয়া হয়না) তাই হার্নিয়া হবার সম্ভাবনা কমাতে এই বেল্ট পরতে বলা হয়)
বাবুর জন্য
  • বাবুকে জড়ানোর জন্য নরম কাথা
  • ইউরিন ম্যাট
  • বাবুর জন্য কয়েক সেট নরম সুতির জামা, ফুল লেংথ রম্পার বা ওয়ানজি,মোজা, কান টুপি যদি শীতকাল হয়।
  • বেবি ওয়াইপস ( ওয়াটার বেইজড টা প্রেফার করি আমি। স্যাভলনের টা ভাল। অনেক বেশি লাগবে এটা)
  • গিলবার্ট লিনিডার্ম ( ন্যাপি র্যাশ, বা বেবিকে পরিষ্কার করার সময় খুব কাজে দিবে) 
  • ডায়াপার অথবা ন্যাপী ( দুইটাই কাজে লাগে)
  • ফিডার (যদি ফর্মুলা আর ব্রেস্ট মিল্ক দুটোই দিতে চান)
  • ফর্মুলা মিল্ক ( যদি মিক্স ফিড করান)
বাবুর জন্য, মায়ের জন্য যে কাপড় ই নিবেন সাবান দিয়ে ধুয়ে ভালোভাবে শুকিয়ে ব্যাগে নিবেন, অনেকে স্যাভলন-ডেটল দিয়ে ধুয়ে নিতে চান, এতে বাচ্চার গায়ে র্যাশ হবার সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে, বাবুকে কোনোভাবেই নতুন কেনা কাপড় পরানো বা গায়ে জড়ানো যাবেনা। ডেলিভারির জন্য যে হাসপাতাল বেছে নিবেন, সেখানে কি কি সুবিধা পাওয়া যায় জেনে নিবেন। কিছু হাসপাতালে বলতে গেলে তেমন কিছুই নেয়া লাগেনা। আর আমার দেয়া লিস্ট থেকে কিছু বাদ পড়লো কিনা কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না ❤

লিখেছেন-

MBBS, MSc, PGT (Dermatology)

Dr Ishrat Nazneen Metee

ছোটবাবুদের স্ক্যাল্প কেয়ার

নাভি শুকিয়ে পড়ে গেলে এরপর থেকে বাবুকে গোসল করাতে পারবেন। গোসলের আগে অলিভ অয়েল দিয়ে সারা গায়ে (স্ক্যাল্পসহ) ম্যাসাজ করে গোসল করাতে পারবেন। সফট ব্রিসল ব্রাশ দিয়ে তার চুল আলতো করে আচড়ে দিতে পারেন। খেয়াল করবেন যেন সরিষার তেল বাবুকে না দেয়া হয়। বাজারে যেসব সরিষার তেল থাকে সেগুলোতে রঙ এবং ক্যামিকেল মিশানো হয় যেটা বাচ্চার নরম স্কিনকে ইরিটেট করে ফেলতে পারে। এছাড়া সরিষার তেল খুব ভারী হয়, স্কিন ব্রিদ করতে পারেনা। সহজেই ফাংগাল ইনফেকশন হতে পারে। নিউবর্ন বাবুর গোসলের সময় খুব বেশি প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে হবেনা। ২/৩ টা প্রোডাক্ট নিলেই চলবে।

 অলিভ অয়েল বা গিলবার্ট লিনিডার্ম গোসলের আগে এবং পরে ম্যসাজের জন্য।

বেবি ওয়াশ, যেটা পা থেকে মাথা পর্যন্ত ব্যবহার করে গোসল করাবেন।

বাচ্চার প্রথম চুল কাটার সময় ব্লেড বা রেজর দিয়ে শেইভ না করে ট্রিমার দিয়ে ট্রিম করুন। ব্লেড বা রেজর দিয়ে শেইভ করলে স্কিন কেটে যাওয়ার রিস্ক তো থাকেই, তাছাড়া ইরিটেশন, র‍্যাশ এবং ফাংগাল ইনফেকশন হবার ও ভয় থাকে।

 আরেকটা গুরুতর ভুল হচ্ছে কয়েক বছরের বাচ্চাদের চুলে বড়দের শ্যাম্পু ইউজ করতে দেয়া। বড়দের শ্যাম্পুতে প্রচুর ইনগ্রেডিয়েন্টস থাকে যেটা বাচ্চাদের ডেলিকেট স্কিনের জন্য খুব ভালো অপশন না।যেমনঃ সালফেট, এটা স্ক্যাল্পের ন্যাচারাল অয়েল স্ট্রিপ অফ করে ফেলে। আপনার বাবুর স্ক্যাল্প এবং চুল যদি অনেক ড্রাই বা সেনসিটিভ থাকে তাহলে এখন থেকেই সবসময় সালফেট ফ্রি শ্যাম্পুগুলোতে অভ্যস্ত করাতে পারেন।

 JOHNSON’S® CottonTouch™ 2-In-1 Bath & Wash, 500 Ml

Johnson’s No More Tears Baby Shampoo, 500 Ml

Aveeno® Baby Daily Care Hair & Body Wash, 300 Ml

 

কখন ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নেয়া জরুরি? 

বাচ্চার স্কিনে যদি এলার্জিক রিয়েকশন হয় কোনো প্রোডাক্ট ইউজের পর তখন নিজেদের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী কোন ওষুধ ব্যবহার না করে ডার্মাটোলজিস্টের সাথে কথা বলে ব্যবহার করতে হবে।

ক্র্যাডেল ক্যাপ খুবই কমন স্ক্যাল্প ইস্যু।যদি মনে হয় বাচ্চার ক্র্যাডল ক্যাপ হয়েছে, তখন চিরুনি বা নখ দিয়ে খুটে মরা চামড়া তোলার চেষ্টা করা যাবেনা।অবশ্যই দেরি না করে ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিতে হবে।

https://asteriabd.com/online-consultation/

লিখেছেন-

MBBS, MSc, PGT (Dermatology)

Dr Ishrat Nazneen Metee

আমার বাচ্চা খায়নাঃ পর্ব-৩

নিজের হাতে খেতে শিখানো

১.৫-২ বছরের একটা বাচ্চা খেতে না চাইবার কিছু কারণ আছে, তার মধ্যে এক হল অতিরিক্ত জোরাজুরি তাকে খাবারের প্রতি ব্রীতশ্রদ্ধ করে তুলেছে আরেকটা হল এই বয়সী বাচ্চারা সাবলম্বি হতে চায়। ভাবে অন্যরা নিজে নিজে খায়, আমিও নিজে খাবো। “নিজে নিজে খাইবো, আমি করি-আমি করি, নিজে করব” এগুলো এই বয়সী বাচ্চাদের কমন ডায়ালগ। এই সময় আপনি যদি সময় বাচাতে তাকে খাইয়ে দিতে চান, সে সেটা মানবে কেন?
৬ মাস বয়স থেকেই আমি আমার বাচ্চাকে ডাইনিং টেবিলের পাশে ফিডিং চেয়ারে বসিয়ে আমাদের সাথেই খেতে দিতাম। যাতে আমাদের খাওয়া দেখে দেখে ও খাওয়া শিখতে পারে।আমরা যে খাবার মুখের কাছে ধরতেসি সেটা দেখে দেখে ও নিজেও সেটা করার চেষ্টা করতো। অবশ্যই শুরুতে বাচ্চা খাবার নিজে ধরে মুখে খেয়ে ফেলবেনা। প্রথমে খাবার দেয়ার পর ৫-১০ মিনিট আমি ওকে নিজের মতো করে খাবার খাওয়ার চেষ্টা করতে দিতাম।সে খেতে যেয়ে খাবার নিয়ে খেলা করতো , খাওয়ার চেষ্টাও করতো।এতে করে ধীরে ধীরে নিজের হাতে খাওয়ার অভ্যাস টা হয়েছে। ৫-১০মিনিট পর আমিই খাইয়ে দিতাম। তবে খেয়াল রাখবেন খাওয়াতে যেয়ে জোর করবেন না। তার চাওয়া অনুযায়ী খাওয়াতে যেয়ে অভুক্ত থাকবে এমন ভয় পাবার দরকার নাই, খিদা লাগলে চাহিদা হবেই।

খাবার খেতে গিয়ে চারপাশ নোংরা করলে

নিজ হাতে খাবার খেতে গেলে বাচ্চা চারপাশ নোংরা করবেই। এটা আশা করবেন না আপনার বাচ্চা এক দুমাসেই গুছিয়ে খাওয়া শিখে যাবে। আমার বাচ্চার বয়স প্রায় ১৯ মাস,সে এখন নিজ হাতে সব বেলার খাবার খায়। কিন্তু কিছু খাবার ফিডিং চেয়ারে পড়ে, কিছু চেয়ারের বাইরেও পড়ে যায়। আর খেতে যেয়ে জামা কাপড় নোংরা তো করেই।সেক্ষেত্রে আমি যেটা করি, বাচ্চাকে গরমের দিনে খালি গায়েই খেতে দেই। এতে খাবারের পর ভেজা কাপড় দিয়ে মুছিয়ে দিলেই হয়। শীতের সময় আমার একটা পুরোনো টিশার্ট পরিয়ে দিতাম, ওটাতেই যা খাবার মেখে যেতো।এরপর ধুয়ে নিতাম।খাবার নিচে পড়লে বারবার পরিষ্কার করাটা ঝামেলা।এজন্য ফিডিং চেয়ারের নিচে একটা পলিথিন বা কাগজ বিছিয়ে দেই। খাওয়া শেষে তুলে ফেলে দেই।

খাবার উগলিয়ে ফেলে দিলে

বাচ্চা খাবার না গিলে বমির মত ওয়াক করছে বা ফেলে দিচ্ছে এটা দেখে ভয়ে অনেকেই মাসের পর মাস লিকুইড, সেমি সলিড খাবার বাচ্চাকে দিতে থাকেন। এটা করার একেবারেই দরকার নেই। বরঞ্চ এভাবে উগলে ফেলে দেয়াটা বাচ্চার একটা স্বাভাবিক প্রটেকটিভ মেকানিজম। বাচ্চাকে যখন আস্তে আস্তে সলিড খাওয়াতে থাকবেন, অভ্যাস না থাকার কারণে ওর একটু আনকমফোর্টেবল লাগবে খেতে। দুয়েক দিন এভাবে উগলে ফেলার চেষ্টা করবে, ধীরে ধীরে শিখে গেলে আর এমন করবেনা। অনেক সময় বড় টুকরা মুখে গেলেও বাচ্চারা চেহারা লাল করে এমন করে, তাতে ভয় না পেলে খাবারটা বের করে আনলেই হবে।

শ্বাসনালীতে খাবার আটকে গেলে

কোভাবেই বাচ্চাকে আংগুরের সাইজের বা চিনাবাদাম সাইজের খাবার গোল করে দেয়া যাবেনা এতে চোকিং হবার রিস্ক অনেক বেশি। পপকর্ন ও ৫বছরের নিচের বাচ্চাদের দিতে নেই। চোকিং হয়ে গেলে এমন সিচুয়েশনে কি করবেন সেটার একটা ভিডিও লিংক দিয়ে দিচ্ছি। এটা আসলে বাচ্চার বাবা-মা, কেয়ার গিভার সবার জানা জরুরি যে চোকিং হলে কি করা দরকার।

কোনো খাবারে এলার্জি থাকলে

শুরুর দিকে একইসাথে অনেকগুলো খাবার না দেয়ার আরেকটা কারণ হচ্ছে কোনো খাবারে এলার্জি আছে কিনা সেটা আইডেন্টিফাই করা। পরপর ৩ দিন শুধু আলু, এরপরের তিনদিন শুধু গাজর, এরপরের তিন দিন শুধু ওটস এভাবে করে একটা একটা খাবার এড করতাম আর খেয়াল করতাম এলার্জিক রিয়েকশন হচ্ছে কিনা। কোনো খাবারে এলার্জি হচ্ছে এমন টা বুঝতে পারলে অবশ্যই সাথে সাথে সেটা খাবারের রুটিন থেকে বাদ দিয়ে দিতে হবে।

আজকের মত এতটুকুই। পড়ে কেমন লাগল কমেন্ট এ জানাবেন আর কোন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই জিজ্ঞাসা করবেন। ধন্যবাদ।

লিখেছেন-

MBBS, MSc, PGT (Dermatology)

Dr Ishrat Nazneen Metee

আমার বাচ্চা খায়নাঃ পর্ব-২

এই সিরিজের ১ম পর্বে , বাচ্চাকে খাওয়ানোর জন্য কি কি প্রোডাক্ট দরকার হতে পারে সেটা নিয়ে লিখেছিলাম। কেউ যদি আগের পর্ব মিস করে থাকেন এই লিংকে যেয়ে পড়তে পারবেন- আমার বাচ্চা খায়নাঃ পর্ব ১

এই পর্বে পুরোটাই লিখেছি বাচ্চার খাবার নিয়ে। আপনারা যারা গত পর্ব পড়েছিলেন, আপনাদের অনেকের কিছু প্রশ্ন ছিলো। এবার সেগুলোর উত্তর দেয়ারও চেষ্টা করেছি। আগামী পর্বে আর কি কি বিষয় নিয়ে লিখব সেটাও জানাতে পারেন কমেন্টে।

প্রথম কথাঃ ১বছর পর্যন্ত বাচ্চার প্রধান খাদ্য মায়ের বুকের দুধ কিংবা ফর্মুলা। ১ বছর পর্যন্ত গরুর দুধ ও দেয়া যাবেনা। আর যেহেতু প্রধান খাদ্য দুধ, তাই বাচ্চা দিনে ২ খানা ডিম খেলোনা, ১ বাটি খিচুড়ি খেলোনা, এই নিয়ে আফসোস এর প্রয়োজন নেই। এই সময়টা বাচ্চা খাবার নিয়ে খেলবে আর নানান খাবারের স্বাদ চিনবে, সলিড দেয়ার উদ্দেশ্য মূলত এটাই।

কখন থেকে বাচ্চাকে বুকের দুধ/ ফর্মুলার পাশপাশি অন্য খাবার দিয়েছি?

বাচ্চার ওজন যদি ঠিকঠাক থাকে তবে ৬ মাস পর্যন্ত তার জন্য বুকের দুধ/ফর্মূলাই যথেষ্ট। তবে যেহেতু ৪ মাস বয়স থেকে বাচ্চার আয়রন স্টোরেজ ধীরে ধীরে কমতে থাকে, তাই আমি সাড়ে পাঁচ মাস থেকে খুব অল্প অল্প করে আয়রন রিচড খাবার দিয়েছি। যেমন: খেজুর,টমেটো, মিষ্টি আলু, বীটরুট, ওটস।

কিভাবে নতুন খাবার ইন্ট্রোডিউস করেছি?

ট্র্যাডিশনালি এদেশে প্রায় সবাই ই নতুন খাবার হিসেবে খিচুড়ি দিয়ে শুরু করেন। খিচুড়িতে মাল্টি-গ্রেইন্স থাকে, হুট করে এতো জটিল খাবার বাচ্চার শরীর হজম করতে পারবেনা। এতোদিন আপনার বাচ্চা শুধুই দুধ খেত।তার জন্য দুধের গন্ধ ছাড়া অন্য কোনো খাবার যেমন পরিচিত না, তার পাকস্থলিও একইসাথে অনেক রকমে নিউট্রিয়েন্স হজম করে অভ্যস্ত না। এক্ষেত্রে আমি যেটা করেছি-
যেকোন একরকমের গ্রেইন, যেমনঃ চালের গুড়ো। চালের গুড়ো বাসায় বানিয়ে সিদ্ধ করে বুকের দুধ/ফর্মূলার সাথে মিশিয়ে পেস্টের মতো করে শুরুর দিকে দিতাম। এমনি করে সিদ্ধ মিষ্টি কুমড়ো, মিষ্টি আলু, ওটস এগুলো একটা একটা করে দুধের সাথে মিশিয়ে দিয়ে দিয়ে ইন্ট্রোডিউস করিয়েছি। এতে হয়েছে কি আমার বাচ্চার জন্য নতুন খাবার খেতে খুব একটা সমস্যা হয়নি। দুধের ফ্লেভার ওর পরিচিত ছিলো, আর যেকোন একটি নতুন খাবার খাওয়া শিখতেও তার সমস্যা হয়নি। প্রতিটা খাবার পরপর তিনদিন দিয়েছি কোন খাবারে এলার্জি আছে কিনা, সেটা বের করতে।

বাচ্চার মিল প্ল্যানিং

এখন আসি কীভাবে বাচ্চার মিল প্ল্যান করা যায় সেটা নিয়ে। কি কি খাবার দেয়া যেতে পারে, কীভাবে দেয়া যেতে পারে, এবং ডিউরেশন টা লিখে দেয়ার চেষ্টা করব। আমি মূলত দুইটা পদ্ধতি মিক্স করে বাচ্চার মিল প্ল্যান করতাম-

১) কনভেনশনাল পিউরে সিস্টেম

এই সিস্টেমেই শুরুতে বাচ্চাকে খাবার দেয়া ভালো। যেকোন খাবার সিদ্ধ করে , ম্যাশড করে সেমি লিকুইড বা লিকুইড করে দিলে বাচ্চার জন্য খেতে সুবিধা হবে। আগে যেটা বলছিলাম, সবজি সিদ্ধ করে দুধের সাথে দেয়া। এটা ছাড়াও ঘরে বানানো দই খেতে দিয়েছি। একটা জিনিস খেয়াল রাখতে হবে কিছুতে চিনি বা লবণ দেয়া যাবেনা। দইয়ের ক্ষেত্রেও টক দইটাই দিতাম, মাঝে মাঝে একটু খেজুর মিক্স করে দিতাম।নতুন একটা স্টাডিতে পড়েছি, ৬ মাসের বাচ্চাকেও পুরো ডিম (সাদা এবং কুসুম সহ) দেয়া যাবে। আমার বাচ্চাকে সাধারণত পোচ করে, স্ক্র্যাম্বল করে ডিম দিয়েছি। খেয়াল রেখেছি যাতে কুসুম শক্ত থাকে। সিদ্ধ ডিম খুব কম দিয়েছি কারণ সিদ্ধ কুসুম অনেক ড্রাই থাকে,গলায় আটকানোর সম্ভাবনা থাকে। রোলড ওটস বাচ্চার জন্য বেশ ভাল, আয়রন রিচ ফুড।

*অনেকে গরুর দুধ দেয়া যাবেনা ভেবে দই ও দেয়া যাবেনা ভাবেন। জানতে হবে, গরুর দুধের প্রোটিন বাচ্চা হজম করতে পারেনা কিন্তু দই তে সেটা ভেংগে স্বাস্থ্যকর ল্যাকটিক এসিড তৈরী হয় তাই গরুর দুধ আর দুধের তৈরী দই আদতে এক নয় এবং দইটা চিনি ছাড়া হলে বরং বাচ্চার জন্য ভাল। দইতে উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে যেটা বাচ্চার হজমশক্তিতে সহায়ক।

২) বেবি-লেড উইনিং

বাচ্চাকে স্পুন ফিড, সেমি সলিড/পিউরে ফিডিং এর সম্পূর্ণ বিপরীত একটা পদ্ধতি বেবি লেড উইনিং। এই পদ্ধতিতে আপনাকে বাচ্চার পেছনে চামচ নিয়ে দৌড়ানোও লাগবেনা। আপনার বাচ্চা নিজে হাতে নিয়ে সলিড খাবার যাতে খাওয়া শিখতে পারে এটার জন্য বেবি লেড উইনিং পদ্ধতিটা বেশ কাজের। বাচ্চাকে পিউরে করে প্রথম কয়েক সপ্তাহ খাওয়ানোর পর ধীরে ধীরে পানি কম দিয়ে দিয়ে সলিড খাবারে অভ্যাস করানো শুরু করেছি। বেবি লেড উইনিং পদ্ধতি অনুযায়ী খাবার সেটা সবজি বা ফ্রু্টস যাই হোক সিদ্ধ করে আঙ্গুলের সাইজে কেটে নিতাম যাতে বাচ্চা ধরে ধরে খেতে পারে।
যেমনঃ কলা, আম, সিদ্ধ আলু, গাজর, ফুলকপি, মুরগির মাংস এগুলো ফিংগার সাইজের করে দিতাম। আলাদা করে বাচ্চার জন্য কিছুই তেমন রান্না করা হয়নাই। আমরা নিজেরা যেটা খাই, সেটাই তুলে নিয়ে খাবার পানিতে আধা ঘন্টা ভিজিয়ে তুলে দিতাম। এতে করে মসলা, তেল, লবন ধুয়ে যেত।তবে গরুর মাংস খুব একটা দেইনাই, উইকে একবার হয়তো দিতাম খুবই অল্প পরিমাণ, শুরু করেছি ৮-৯মাসে। এভাবে করে আস্তে আস্তে পুরো ম্যাশড থেকে সিদ্ধ করে নরম কিন্তু আস্ত খাবার দেয়া শুরু করি। এই প্রসেসটার সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে বাচ্চা মাড়ি দিয়ে চাবানো শিখে। এতে করে তার দাঁত সময়মতো গজানোর সম্ভাবনাও বাড়ে।

আজ এটুকুই। পড়বার জন্য ধন্যবাদ আর আপনার মূল্যবান মতামত জানাতে ভুলবেন না।

 

লিখেছেন-

MBBS, MSc, PGT (Dermatology)

Dr Ishrat Nazneen Metee