আমার বাচ্চা খায়নাঃ পর্ব ১
জানি সবাই এই পর্বের জন্য আগ্রহ নিয়ে বসে আছেন। বেশ লম্বা সিরিজ এটা, অনেক কিছুই লিখতে হবে। পাশাপাশি আপনাদের প্রশ্নের উপর ভিত্তি করে লেখা আরো বাড়াবো। পড়ে জানাবেন কেমন লাগল আর কি কি বিষয় লিখতে হবে।
তাবত দুনিয়ার এমন কোন মা, খালা, নানী, দাদী নাই যারা এই কমপ্লেইন করেনা যে আমার বা আমাদের বাবু খায়না। এমন কোন ডাক্তার নেই যে এই কমপ্লেইন শুনেনাই। আমার হাজব্যান্ড কে যখন কেউ ফোন দিয়ে বলে, বাচ্চা খায়না, ইদানিং সে বলে, আমার বাচ্চা তো খায়। আসলেই কি বাচ্চা খায়না নাকি আপনার মন মত খায়না?
আজকে বাচ্চার খাওয়ার জন্য কি কি প্রোডাক্ট কিনেছি আগে সেটা নিয়ে আলাপ করি। বাচ্চার একটা ফিডিং চেয়ার খুব খুব ইম্পর্ট্যান্ট। অনলাইন শপ, গুলশান ডিসিসি, যমুনা ফিউচার পার্ক, কিডস এন্ড মমস যাতীয় দোকানে ফিডিং চেয়ার পাবেন। কিনতে গেলে বেশি দামের টার দিকেই চোখ পড়ে, লোভ লাগে কিন্তু বাচ্চার জন্য আসলে সস্তা চেয়ার টাই এনাফ। তবে আমি পার্সোনাল এক্সপেরিয়েন্স এ যেটা দেখলাম, চাকা ছাড়া চেয়ার সেইফ। টেবিলটা আলাদা করা গেলে ধুতে সুবিধা। ৪-৫মাস বয়স থেকেই বাচ্চাকে অন্যরা খাবার সময় টেবিলের কাছে, সামনে রাখলে সে খাবারের প্রতি আগ্রহ দেখায় আর বুঝে যে টেবিলে বসে খেতে হয়। পরবর্তিতে বসতে শিখলেই চেয়ার এ নিয়ে সবার খাওয়ার সময় পাশে বসিয়ে রাখলে সে অভ্যস্ত হয়। অনেকে হাতের উপর শুইয়ে বাচ্চাকে খাওয়ান, এটা খুব রিস্কি। খাবার শ্বাসনালীতে গিয়ে বাচ্চার নিউমোনিয়া থেকে শুরু করে চোকিং (গলায় খাবার আটকে দম বন্ধ হয়ে যাওয়া) পর্যন্ত হতে পারে। আবার বাচ্চা যখন হামাগুড়ি/হাঁটা শিখে তখন তার পিছে পিছে দৌড়াতে হয়না। একটা ভাল অভ্যাস এর জন্য ফিডিং চেয়ার জরুরী।
বাচ্চার জন্য সাকশন বোল এর কোন প্রয়োজন নেই। প্লাস্টিক এর বাটি/চামচ এর দরকার নেই। ঘরের আইটেম ই ইউজ করা যায়। শুধু একটা ছোট সিলিকন চামচ কিনে নিতে হবে। এতে করে বাচ্চা ব্যাথা পাবেনা। খাবার প্লাস্টিক এর আইটেম এ গরম না করে কাচের পাত্রে গরম করা ভাল। নন স্টিক ফ্রাই প্যান ইউজ না করে স্টিল এর ফ্রাই প্যান/কড়াই ব্যবহার করা সেইফ। একটা সিপি কাপ কিনে নিলে ভাল। ১২মাস থেকে পাইপ ওয়ালা সিপি কাপ দিলে বাচ্চা অনায়াসে টেনে খেতে পারে। এছাড়া খুব ছোট গ্লাস/কাপ দিয়েও অল্প অল্প করে চুমুক দিয়ে খাওয়া প্র্যাকটিস করাতে পারেন। বাজেট এ না হলে স্যুপের চামচ দিয়েই অল্প অল্প করে পানি খাওয়ানো যায়।
আমি আমার বাচ্চাকে এক দিনের জন্য ও খাবার ব্লেন্ড করে খাওয়াই নাই। অনেকে শুরুতেই হ্যান্ড ব্লেন্ডার কিনেন, আমি কোন প্রয়োজন দেখিনাই। বাচ্চাকে যতদিন নরম খাবার খাওয়াবেন, বাচ্চা ততদিন চাবানো শিখবেনা, গিলে খাবে, দাঁত আসতে দেরী হতে পারে এবং স্বাভাবিক খাবার খেতে তত দেরী হবে। আমি কিভাবে ধীরে ধীরে বাচ্চাকে নরমাল খাবারে অভ্যস্ত করেছি, সেটা ডিটেইলস এ লিখব পরের পর্বে।
বাচ্চার ওজন যদি ভাল থাকে তাহলে বাচ্চাকে ৬মাস কমপ্লিট করা পর্যন্ত বুকের দুধ ই খাওয়ান। তবে ৪মাসের পর থেকে বাচ্চার আয়রন স্টোরেজ ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে তাই ৫মাসের পর থেকে চাইলে আয়রন রিচ আইটেম এড করতে পারেন। যেমন খেজুর, ওটস, বীট রুট। এগুলো সবই ধীরে ধীরে খুবই অল্প পরিমানে, টানা তিনদিন দিয়ে এলার্জি চেক করে দিতে হবে। ৬মাস এ পড়লেই ৩-৪ আইটেম মিলিয়ে আমাদের দেশের মা খালা নানীরা খিচুড়ি গিলাইতে থাকেন বাচ্চাকে। খুব খুব খুব ভুল একটা কাজ। ৬মাসের বাচ্চার পেটে এগুলা তেমন কিছুই হজম হয়না। ১ বছর বয়স পর্যন্ত বাচ্চার আসল পুষ্টি আসে দুধ থেকে (মায়ের দুধ বা ফর্মুলা। গরুর দুধ না)। ১বছরের আগ পর্যন্ত বাচ্চাকে বাইরের খাবার দেয়ার প্রধান কারন হল এলার্জি চেক করা, বাইরের খাবারের স্বাদ এর সাথে তাকে পরিচিত করা আর খাবারের একটা রুটিন তৈরী করা। আশা করবেন না যে এক বছরের আগে বাচ্চা দিনে ২-৩বাটি খিচুড়ি কিংবা ১ বাটি সুজি সাবাড় করে দিবে। মায়েদের এই অযৌক্তিক আশার সাথে মিলেনা বলেই মায়েরা কমপ্লেইন করে, আমার বাচ্চা কিছু খায়না।
ওহ আরেকটা জীবন নাশকারি অভ্যাস হল বাচ্চাকে ঘুমের মধ্যে খাওয়ানো। এটা রীতিমত গর্হিত অপরাধ এর মধ্যে পড়ে। অনেকেই হয়ত এই লিখা পড়তে পড়তে বলবেন, আজীবন সবাই এভাবেই খেয়ে আসছে, কিছুই হয়নাই। এখন আবার এসব কি নতুন কথাবার্তারে বাবা? তবে এখানে একটা ব্যাপার আছে। ঘরে ঘরে প্রেশার, ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ, ক্যান্সার আর অতিরিক্ত ওজনের কারনে হৃদরোগ সহ এরকম হাজারো রোগ এর ছড়াছড়ি সব দিকে। তাহলে আসলেই কি যুগ যুগ ধরে চলে আসা খাবারের নিয়মটা ঠিক ছিল? ভাবুন!
লিখেছেন-