নিজের হাতে খেতে শিখানো
১.৫-২ বছরের একটা বাচ্চা খেতে না চাইবার কিছু কারণ আছে, তার মধ্যে এক হল অতিরিক্ত জোরাজুরি তাকে খাবারের প্রতি ব্রীতশ্রদ্ধ করে তুলেছে আরেকটা হল এই বয়সী বাচ্চারা সাবলম্বি হতে চায়। ভাবে অন্যরা নিজে নিজে খায়, আমিও নিজে খাবো। “নিজে নিজে খাইবো, আমি করি-আমি করি, নিজে করব” এগুলো এই বয়সী বাচ্চাদের কমন ডায়ালগ। এই সময় আপনি যদি সময় বাচাতে তাকে খাইয়ে দিতে চান, সে সেটা মানবে কেন?
৬ মাস বয়স থেকেই আমি আমার বাচ্চাকে ডাইনিং টেবিলের পাশে ফিডিং চেয়ারে বসিয়ে আমাদের সাথেই খেতে দিতাম। যাতে আমাদের খাওয়া দেখে দেখে ও খাওয়া শিখতে পারে।আমরা যে খাবার মুখের কাছে ধরতেসি সেটা দেখে দেখে ও নিজেও সেটা করার চেষ্টা করতো। অবশ্যই শুরুতে বাচ্চা খাবার নিজে ধরে মুখে খেয়ে ফেলবেনা। প্রথমে খাবার দেয়ার পর ৫-১০ মিনিট আমি ওকে নিজের মতো করে খাবার খাওয়ার চেষ্টা করতে দিতাম।সে খেতে যেয়ে খাবার নিয়ে খেলা করতো , খাওয়ার চেষ্টাও করতো।এতে করে ধীরে ধীরে নিজের হাতে খাওয়ার অভ্যাস টা হয়েছে। ৫-১০মিনিট পর আমিই খাইয়ে দিতাম। তবে খেয়াল রাখবেন খাওয়াতে যেয়ে জোর করবেন না। তার চাওয়া অনুযায়ী খাওয়াতে যেয়ে অভুক্ত থাকবে এমন ভয় পাবার দরকার নাই, খিদা লাগলে চাহিদা হবেই।
খাবার খেতে গিয়ে চারপাশ নোংরা করলে
নিজ হাতে খাবার খেতে গেলে বাচ্চা চারপাশ নোংরা করবেই। এটা আশা করবেন না আপনার বাচ্চা এক দুমাসেই গুছিয়ে খাওয়া শিখে যাবে। আমার বাচ্চার বয়স প্রায় ১৯ মাস,সে এখন নিজ হাতে সব বেলার খাবার খায়। কিন্তু কিছু খাবার ফিডিং চেয়ারে পড়ে, কিছু চেয়ারের বাইরেও পড়ে যায়। আর খেতে যেয়ে জামা কাপড় নোংরা তো করেই।সেক্ষেত্রে আমি যেটা করি, বাচ্চাকে গরমের দিনে খালি গায়েই খেতে দেই। এতে খাবারের পর ভেজা কাপড় দিয়ে মুছিয়ে দিলেই হয়। শীতের সময় আমার একটা পুরোনো টিশার্ট পরিয়ে দিতাম, ওটাতেই যা খাবার মেখে যেতো।এরপর ধুয়ে নিতাম।খাবার নিচে পড়লে বারবার পরিষ্কার করাটা ঝামেলা।এজন্য ফিডিং চেয়ারের নিচে একটা পলিথিন বা কাগজ বিছিয়ে দেই। খাওয়া শেষে তুলে ফেলে দেই।
খাবার উগলিয়ে ফেলে দিলে
বাচ্চা খাবার না গিলে বমির মত ওয়াক করছে বা ফেলে দিচ্ছে এটা দেখে ভয়ে অনেকেই মাসের পর মাস লিকুইড, সেমি সলিড খাবার বাচ্চাকে দিতে থাকেন। এটা করার একেবারেই দরকার নেই। বরঞ্চ এভাবে উগলে ফেলে দেয়াটা বাচ্চার একটা স্বাভাবিক প্রটেকটিভ মেকানিজম। বাচ্চাকে যখন আস্তে আস্তে সলিড খাওয়াতে থাকবেন, অভ্যাস না থাকার কারণে ওর একটু আনকমফোর্টেবল লাগবে খেতে। দুয়েক দিন এভাবে উগলে ফেলার চেষ্টা করবে, ধীরে ধীরে শিখে গেলে আর এমন করবেনা। অনেক সময় বড় টুকরা মুখে গেলেও বাচ্চারা চেহারা লাল করে এমন করে, তাতে ভয় না পেলে খাবারটা বের করে আনলেই হবে।
শ্বাসনালীতে খাবার আটকে গেলে
কোভাবেই বাচ্চাকে আংগুরের সাইজের বা চিনাবাদাম সাইজের খাবার গোল করে দেয়া যাবেনা এতে চোকিং হবার রিস্ক অনেক বেশি। পপকর্ন ও ৫বছরের নিচের বাচ্চাদের দিতে নেই। চোকিং হয়ে গেলে এমন সিচুয়েশনে কি করবেন সেটার একটা ভিডিও লিংক দিয়ে দিচ্ছি। এটা আসলে বাচ্চার বাবা-মা, কেয়ার গিভার সবার জানা জরুরি যে চোকিং হলে কি করা দরকার।
কোনো খাবারে এলার্জি থাকলে
শুরুর দিকে একইসাথে অনেকগুলো খাবার না দেয়ার আরেকটা কারণ হচ্ছে কোনো খাবারে এলার্জি আছে কিনা সেটা আইডেন্টিফাই করা। পরপর ৩ দিন শুধু আলু, এরপরের তিনদিন শুধু গাজর, এরপরের তিন দিন শুধু ওটস এভাবে করে একটা একটা খাবার এড করতাম আর খেয়াল করতাম এলার্জিক রিয়েকশন হচ্ছে কিনা। কোনো খাবারে এলার্জি হচ্ছে এমন টা বুঝতে পারলে অবশ্যই সাথে সাথে সেটা খাবারের রুটিন থেকে বাদ দিয়ে দিতে হবে।
আজকের মত এতটুকুই। পড়ে কেমন লাগল কমেন্ট এ জানাবেন আর কোন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই জিজ্ঞাসা করবেন। ধন্যবাদ।
লিখেছেন-