ডেলিভারীর আগে ও পরে স্তনের যত্ন
আপনি যদি এখন প্রেগন্যান্ট হয়ে থাকেন অথবা মাত্রই নতুন বাবুর জন্ম দিয়েছেন তবে প্রথমেই আমার আন্তরিক অভিনন্দন জানবেন। প্রেগন্যান্সির একদম শুরু থেকেই ধীরে ধীরে হবু মায়ের স্তনে বিরাট পরিবর্তন আসতে শুরু করে যেটা সম্পুর্নই স্বাভাবিক এবং হরমোনাল। ডেলিভারীর আগে স্তনের তেমন বিশেষ কোন যত্ন নিতে হয়না। নিয়মিত গোসল করলেই স্বাভাবিক ভাবে স্তন পরিস্কার থাকে। তবে থার্ড ট্রাইমেস্টার এ স্তন এ অতিরিক্ত সাবান ঘষা, স্তনের বোটায় জমে থাকা মরা চামড়া বা সাদা আস্তরন সরানোর চেষ্টা না করাই উচিত কারণ এতে করে অসময়ে ডেলিভারীর ব্যাথা শুরু হয়ে যেতে পারে। স্বাভাবিক পানি দিয়ে পরিস্কার করা, কারো যদি অলরেডি বুকের দুধ এসে থাকে সেটা নিপল এর আশেপাশে একটু লাগিয়ে রাখলেও ময়েশ্চারাইজড থাকে। তবে সবচেয়ে ভাল হয় একটা নিপল ক্রিম ব্যবহার করা অন্তত দিনে ২বার। এতে করে নিপল ময়েশ্চারাইজড থাকে এবং ডেলিভারীর আগে অথবা পরে নিপল ক্র্যাক এর সম্ভাবনা কমে।
ডেলিভারীর পরে স্তনের যত্ন অনেক অনেক জরুরী। বিশেষত যদি প্রথমবার মা হয়ে থাকেন এবং বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর পরিকল্পনা করে থাকেন তবে হঠাৎ করে বাচ্চার এত ঘন ঘন ফিডিং এ প্রায় ১০০ ভাগ মায়েদের ই নিপল ক্র্যাক হয়। এটা যে কি পরিমাণ পেইনফুল শুধু যার হয়েছে তারপক্ষেই বুঝা সম্ভব। নিপলের চামড়া উঠে লালচে দগদগে ঘা হয়ে থাকে এবং বাচ্চাকে খাওয়ানোর অবস্থা থাকেনা এতটাই পেইনফুল হয়। তাই ডেলিভারীর আগে থেকেই এই ব্যপারে সতর্ক থাকতে হবে এবং অবশ্যই নিপল ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। প্রতিবার ফিডিং এর পর দুই নিপল এ ক্রিম লাগিয়ে রাখতে হবে এবং পরবর্তি ফিডিং এর আগে টিস্যু দিয়ে মুছে ফেললেই বাচ্চাকে খাওয়ানো যাবে। তবে বেশ কিছু নিপল ক্রিম আছে যেগুলো সম্পুর্ন অর্গানিক এবং সেগুলো বাচ্চাকে খাওয়ানোর সময় ও মুছে নেয়ার প্রয়োজন হয়না। দুই প্রকার নিপল ক্রিম ই বর্তমানে এসটেরিয়াতে এভেইলএবল আছে।
নিপল ক্রিম সাইজ এ ছোট হয়, প্রয়োজন ও পড়ে খুব অল্প পরিমানে কিন্তু একটা নিপল ক্রিম একটা লাইফ সেভার আর মাল্টিপারপাজ এ ইউজ করা যায়। নিপল ক্রিম ঠোঁট ও ময়েশ্চারাইজ করে আর বাচ্চার ডায়াপার ক্রিম হিসেবেও ব্যবহার উপোযোগী। তাই এর পিছনে ইনভেস্ট করার আগে চিন্তার কোন কারণ ই নেই।
হয়তো ভেবে থাকবেন যে আমার বাবুর ১মাস হয়ে গিয়েছে, আমার ও ক্র্যাকড নিপল হিল হয়ে গিয়েছে, আর কি নিপল ক্রিমের প্রয়োজন আছে? দুঃখজনক হলেও সত্য, আছে। বাচ্চার যখন দাঁত উঠে, তখন ও কামড় এ নিপল ক্র্যাক হয়। তাই নিপল ক্রিম এর উপকারিতা একেবারেই শেষ বলা যাচ্ছেনা।
ব্রেস্ট ফিডিং মায়েদের আরেকটা খুব খুব কমন সমস্যা হল ব্রেস্ট এনগর্জমেন্ট থেকে ম্যাস্টাইটিস। বুকে দুধ জমে গিয়ে ইনফেকশন হয়ে যাওয়া, প্রচন্ড ব্যাথা সাথে মায়ের জ্বর। প্লিজ প্লিজ এই অবস্থায় যেন না পড়তে হয় তার সমাধান খুব সহজ কিন্তু কেউ অবহেলায় এই কঠিন সিচুয়েশন এ নিজেকে নিয়ে দাঁড় করাবেন না। এতে নিজের ও কষ্ট, বাচ্চার ও কষ্ট হয়। নিয়ম হল বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় হাত দিয়ে মাঝে মাঝেই স্তনে হালকা করে ম্যাসাজ করা যেন কোন পাশে দুধ জমে না থাকে। খাওয়ানোর আগে সম্ভব হলে কুসুম গরম পানিতে ছোট রুমাল ভিজিয়ে স্তনে সেঁক দেয়া, এতে করে সহজেই দুধ নামবে। আর গোসলের সময় অল্প কিছুক্ষন কুসুম গরম পানি স্তনের উপর ঢালা। এতে করে কোন অংশে চাকা হয়ে দুধ জমে থাকলে সেটা লিকুইড হবে।
খুব খুব ছোট এবং অল্প সময়ের যত্ন কিন্তু অবহেলায় কষ্ট পাবেন অনেক বেশি। লেখাটি পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ আর কেমন লাগল পড়ে, কমেন্ট এ অবশ্যই জানাবেন। ভাল থাকবেন।
লিখেছেন-