অনেকেই বাচ্চার ঘুম নিয়ে লিখতে বলেছিলেন, তাই একটা চমকপদ টাইটেল দিয়ে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষন করছি। তবে টাইটেল্টি মিথ্যা নয়। আশা করছি ১০মাস+ সব বাবুরাই সুন্দর রুটিন মেইন্টেইন করে ১০-১২ ঘন্টা রাত্রে এবং ২-৩টা ন্যাপ দিনে নিচ্ছে। আজকের লেখা মেইনলি নিউ মম দের জন্য।
অনেকেই জানেন না যে একদম নিউবর্ন বেবির প্রতি ঘন্টা থেকে হায়েস্ট প্রতি ২ঘন্টায় ফিডিং দরকার হয়। একারনে বাচ্চারা প্রথম ১-১.৫মাস সাধারনত এই ফ্রিকোয়েন্সিতে ঘুম থেকে জাগে। প্রথম ২মাস তাই বিশেষত বাচ্চার মায়ের একেবারেই নির্ঘুম কাটে। তবে এক্ষেত্রে আমি একটা বুদ্ধি করে নিয়েছিলাম, যেহেতু আমার বাবু ৩দিন বয়স থেকে ফর্মুলাও খেতো দিনে ১/২ বার, তাই রাত্রে একটা ফিডিং তার বাবা উঠে দিত। ফলে ১মাস এর পর থেকে আমি রাত্রে মোটামোটি টানা ৪ঘন্টা ঘুমাতে পারতাম। ইউজালি ১০/১১টায় ঘুমিয়ে যেতাম, ১-২টা নাগাদ একটা ফিডিং বাবা দিত ফর্মুলা। আমি আবার ৩-৪টা উঠে খাওয়াতাম। যারা ফর্মুলা দিচ্ছেন না, তারা পাম্প করে একই পদ্ধতিতে খাওয়াতে পারেন।
অনেকেই আমাকে জিজ্ঞাসা করতেন বাবু রাত জাগে? উত্তরে ‘না’ বললে খুশি ও হতেন, অবাক ও হতেন। অবশ্যই আমার লাক ভাল যে বাবু রুটিন ভালমতন মেইন্টেইন করেছে, তবে শুরু থেকেই আমি কিছু স্ট্রিক্ট রুটিন ফলো করেছি।
১. প্রথম ৩মাস বাবু দিনে ঘুমালে রুম আলো থাকত। পর্দা সরানো থাকতো, দিনের আলো আসত। অনেক সময় রুমের লাইট ও জ্বালানো থাকত।
২. রাত ৮টা থেকে রুমের লাইট একে বারেই বন্ধ থাকতো। একটা ছোট টেবিল ল্যাম্প এর উপরে আবার রুমাল দিয়ে খুব ডিম করে আলো থাকতো শুধু ওর ফীডার বানানোর জন্য। ৮টার পর ওকে কোনভাবেই আমি আর আলোতে নিতাম না এবং রুমের লাইট জ্বালাতাম না। ডায়াপার চেইঞ্জ করলেও সেটা অন্ধকারে। বাবু যখন আস্তে আস্তে হাসতে শিখেছে, আমার দিকে তাকিয়ে ইন্টর্যাক্ট করতে চাইতো, আমি ওর চোখের দিকে তাকাতাম ও না। এতে করে ও দিনে আলো আর রাতে আঁধার এবং রাত হলো ঘুমানোর সময়, দিন হল খেলার সময়, এগুলো ধীরে ধীরে বুঝতে শিখেছে।
৩. বাবুর ৭দিন বয়স থেকে আমি স্ট্রিকটলি নাইট টাইম রুটিন ফলো করেছি। সন্ধ্যা ৭.৩০ টায় ওকে আমাদের স্বাভাবিক স্কিন টেম্পারেচার এর পানি দিয়ে রুমাল দিয়ে গা মুছে দিতাম। ডায়াপার- ড্রেস চেইঞ্জ করে দুধ খাইয়ে লাইট অফ করে দিতাম। এটা ছিল ওর প্রথম ৩মাসের রুটিন। এরপর শীতের সময় কুসুম গরম পানি দিয়ে মুছাতাম। এখন একটু দেরীতে ঘুমায়, তাই শরীর মুছাই ডিনারের পর, ৯.৩০ তে। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ্, গত ১ বছরে, একদিনের জন্য ও এই রুটিন মিস হয়নি। এতে করে বাবু বুঝে যে সন্ধ্যায় গা মুছানো, ড্রেস চেইঞ্জ মানেই আমার ঘুমের সময় হচ্ছে। আর ওরাও খুব আরাম বোধ করে তাই ভাল ঘুম হয়।
৪. কিছু ব্যাপার জানতে হবে। এগুলো নিয়ে গুগল করতে পারেন বা কমেন্ট করলে আমি সময় পেলে লিখব। যেমন বাচ্চাদের প্রথম বছরে কয়েকবার গ্রোথ স্পার্ট হয়, এসময় বাচ্চাদের ঘুমের রুটিন কয়েকবার চেইঞ্জ হয় বা একটু ডিসটার্বড হয়। সময় গুলো জেনে রাখলে মেন্টার প্রিপারেসন থাকবে। এছাড়া ৪-৫মাস বয়সে স্লিপ রিগ্রেশন হয় অনেকের, এটা একদম স্বাভাবিক।
বাচ্চাকে এখন না ঘুম পাড়ালে বা দেরী করে ঘুমালে তাড়াতাড়ি ঘুমাবে এবং লম্বা ঘুমাবে এটা একটা মারাত্মক ভুল ধারনা!!! বাচ্চা যত বেশি টায়ার্ড হবে তত ঘুমাতে রেসিস্ট করবে, কান্না করবে এবং কষ্ট পাবে।
১ বছর পর্যন্ত বাচ্চা দিনে যত ভাল ঘুমাবে (বেশি ঘুম না, টাইমলি ঘুম) সে রাত্রেও তত ভাল ঘুমাবে। সো ন্যাপ প্রোপার টাইম এ নিচ্ছে কিনা, খেয়াল করুন।
১বছরের উপরের অনেক বাচ্চাই ন্যাপ নিতে চায়না। জোর করার দরকার নাই। ফুল নাইট স্লিপ ই এনাফ।
দাঁত উঠে গেলে রাত্রে ঘুমের মধ্যে ফর্মুলা না খাওয়ানোই ভাল। দাঁত নষ্ট হয়। আর মোবাইলে হোয়াইট নয়েজ এপ নামিয়েছি। খুব কাজের জিনিস।
আজ আপাতত এটুকুই। ধন্যবাদ।
লিখেছেন-