বাচ্চার স্পীচ থেরাপি

১. ঢাকা শহরে স্পীচ থেরাপি কোথায় করায়?

২. আমার ১৬ মাসের বাচ্চা এখনো মা বাবা বলেনা, এটাকি নরমাল?

৩. বাচ্চাকে কত বয়স থেকে স্পীচ থেরাপি দিতে হবে?

৪. আপনাদের কার বাচ্চা কত বয়সে কথা বলেছে?

এই প্রশ্নগুলো ফেইসবুক এ বিভিন্ন মায়েদের গ্রুপ এ খুব কমন প্রশ্ন। অন্যদিকে আমার বাচ্চা ১২মাসে ইন্ডিপেন্ডটলি ২৮টা মিনিংফুল শব্দ বলে আর আমরা বললে আরো কিছু রিপিট করে। আজ তাহলে আমি কি কি করেছি সেই বিষয়ে আলাপ করছি আর পাশাপাশি আপনাদের কখন এক্সপার্টহেল্প নিতে হবে, সেটাও পয়েন্ট আউট করে দিব।

একজন মানুষের জন্মের সাথেই সাথেই তার ভাষা শিক্ষা শুরু হয়। তবে একজন বাচ্চার ভাষা শিক্ষার একটা প্রথম পয়েন্ট হল শুনতে পাওয়া। তাই নিউবর্ন বেবি আপনার আওয়াজ এ বা যেকোন শব্দেই সেদিকে চোখ ঘুরাচ্ছে কিনা, মাথা ঘুরাচ্ছে কিনা শুরু থেকেই এগুলা খেয়াল রাখবেন। আমাদের দেশে যেহেতু রুটিন চেকাপ হিসেবে কানের পরীক্ষা করা হয়না, তাই নিজেদের সন্দেহ হলে নাক কান গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিবেন।

বাচ্চা যতক্ষন জাগনা থাকে তার সাথে অল্প অল্প আলাপ করা দরকার। বিশেষত ৩ মাস বয়স থেকে আমি আমার বাচ্চার সাথে সারাক্ষন কথা বলতাম। বাসায় একা থাকতাম, পাপা কোথায়? নান কোথায়? এসব বলতাম। দুইটা দিকে আমি খুব সুবিধা পেয়েছি, ১. আমি খুব বাচাল, ম্যাক্সিমাম টাইম ই বাবুর সাথে বকবক করতাম (পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশনের কারনে অনেক সময় কিছুই বলতে মন চাইতোনা) ২. নানা নানী সবসময় সাথে থাকায় তারা খেলাচ্ছলে ওর সাথে সব সময়ই কথা বলত। স্বাভাবিকভাবেই বাচ্চা যত বেশি কথা শুনবে তত বেশি কথা শিখবে। অনেকেই ভাবতে পারেন, এত কি বলব অবুঝ বাচ্চার সাথে? এক্ষেত্রে সহজ টিপস হল, যা করছেন তাই বলবেন। যেমন- চল আমরা এখন হাপ্পু পরব। এটা কি? হাপ্পু! আমরা এখন গোসল করছি! বোল টা কি কালার? লাল!  এভাবে ডেসক্রাইব করলে আর কথা খুজে না পাওয়ার কোন কারণ নেই।

বাচ্চার সাথে যথা সম্ভব বেবি টক না করাই ভাল। যদিও আমি মাম এবং হাপ্পু শিখিয়েছি, তবে চেষ্টা করেছি যতটুকু মিনিমাম রাখা যায় বিকৃত শব্দ আর বেবি টক। এতে করে বাচ্চা ইন্সট্রাকশন খুব সহজে বুঝতে শিখে। আমার মেয়ে প্রচুর ভার্বাল ইন্সট্রাকশন এখন বুঝে কারণ আমরা তার সাথে এগুলা বারেবারে রিপিট করেছি। আর ৩মাসের পর থেকেই কোলে নিয়ে ঘরেই ঘুরতে ঘুরতে টিভি, ফ্রিজ, ছবি, ফ্যান, বাথরুম কোনটা কি এগুলো দেখাতাম টাইম পাস হিসেবে। এখন সে সব গুলোই পয়েন্ট আউট করতে পারে।

বাচ্চাকে কোন শব্দ বলা শিখাতে হলে রিপিটেশন এর কোন এলটারনেটিভ নাই। যখন বয়স ৭/৮ মাস ছিল তখন একটা শব্দ মুখ দিয়ে বের করতে ৭ দিন রিপিট করেছি। শব্দ ছিল  “ওয়াও”। এখন ১ দিন ও রিপিট করতে হয়না, আধা বেলাতেই শিখে যায়। যেমন লাল কোনটা এবং শব্দটা যে লাল, ঘরে যা ছিল লাল দেখিয়ে দেখিয়ে বারবার বলতাম “লাল”। এখন সেও লাল দেখলে নিজেই বলে।

১২ মাসের বাচ্চা স্বাভাবিকভাবে বাবা/মা/দাদা বলে। ১৮-২৩ মাসের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে ৫০টা শব্দ বলে। ২ বছর পার হয়ে যাবার পর ও যদি বাচ্চা ৫০টা শব্দের কাছাকাছি না বলে, তাহলে শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন বা স্পিচ থেরাপি সেন্টার এ কথা বলুন। আমার এই পোষ্টের উদ্দেশ্য আপনাকে প্যানিক এটাক দেয়া বা আপনার বাচ্চার উপরে প্রেশার দেয়া নয়। কিভাবে আগে থেকে স্টেপস নিলে বেটার রেজাল্ট পাওয়া যায় আর কখন এলার্ট হতে হবে, সেটা বুঝানো। আজকাল আমরা সবাই ওয়ার্কিং আর মাইক্রো ফ্যামিলি। সেক্ষেত্রে বাচ্চার বাবা মা কেই এগুলো শুরু থেকে খেয়াল রেখে প্র্যাকটিস করতে হবে। বাচ্চাকে ১ বছরের আগে কোন ভাবেই স্ক্রিন দিতে নেই, ১০মাসের পর দিলেও হায়েস্ট ১০ মিনিট এবং মোবাইল বা ট্যাব না দিয়ে টিভি দেয়া মন্দের ভাল। বাচ্চা ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস থেকে শিখে অনেক কিছুই কিন্তু ডিভাইস তার জন্য অপেক্ষা করেনা, চলতেই থাকে। এসব বাচ্চা এই কারণে রিপ্লাই দিতে, রেজপন্স করতে শিখেনা, তাই বাচ্চাকে ডিভাইস থেকে যতদূর সম্ভব দূরে রাখবেন।

আপনার জানা মতে যদি কোন টিপস থাকে, প্লিজ কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ।

লিখেছেন-

MBBS, MSc, PGT (Dermatology)

Dr Ishrat Nazneen Metee

আমার বাচ্চা রাত্রে ১২ঘন্টা ঘুমায়

অনেকেই বাচ্চার ঘুম নিয়ে লিখতে বলেছিলেন, তাই একটা চমকপদ টাইটেল দিয়ে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষন করছি। তবে টাইটেল্টি মিথ্যা নয়। আশা করছি ১০মাস+ সব বাবুরাই সুন্দর রুটিন মেইন্টেইন করে ১০-১২ ঘন্টা রাত্রে এবং ২-৩টা ন্যাপ দিনে নিচ্ছে। আজকের লেখা মেইনলি নিউ মম দের জন্য।
অনেকেই জানেন না যে একদম নিউবর্ন বেবির প্রতি ঘন্টা থেকে হায়েস্ট প্রতি ২ঘন্টায় ফিডিং দরকার হয়। একারনে বাচ্চারা প্রথম ১-১.৫মাস সাধারনত এই ফ্রিকোয়েন্সিতে ঘুম থেকে জাগে। প্রথম ২মাস তাই বিশেষত বাচ্চার মায়ের একেবারেই নির্ঘুম কাটে। তবে এক্ষেত্রে আমি একটা বুদ্ধি করে নিয়েছিলাম, যেহেতু আমার বাবু ৩দিন বয়স থেকে ফর্মুলাও খেতো দিনে ১/২ বার, তাই রাত্রে একটা ফিডিং তার বাবা উঠে দিত। ফলে ১মাস এর পর থেকে আমি রাত্রে মোটামোটি টানা ৪ঘন্টা ঘুমাতে পারতাম। ইউজালি ১০/১১টায় ঘুমিয়ে যেতাম, ১-২টা নাগাদ একটা ফিডিং বাবা দিত ফর্মুলা। আমি আবার ৩-৪টা উঠে খাওয়াতাম। যারা ফর্মুলা দিচ্ছেন না, তারা পাম্প করে একই পদ্ধতিতে খাওয়াতে পারেন।
অনেকেই আমাকে জিজ্ঞাসা করতেন বাবু রাত জাগে? উত্তরে ‘না’ বললে খুশি ও হতেন, অবাক ও হতেন। অবশ্যই আমার লাক ভাল যে বাবু রুটিন ভালমতন মেইন্টেইন করেছে, তবে শুরু থেকেই আমি কিছু স্ট্রিক্ট রুটিন ফলো করেছি।

১. প্রথম ৩মাস বাবু দিনে ঘুমালে রুম আলো থাকত। পর্দা সরানো থাকতো, দিনের আলো আসত। অনেক সময় রুমের লাইট ও জ্বালানো থাকত।

২. রাত ৮টা থেকে রুমের লাইট একে বারেই বন্ধ থাকতো। একটা ছোট টেবিল ল্যাম্প এর উপরে আবার রুমাল দিয়ে খুব ডিম করে আলো থাকতো শুধু ওর ফীডার বানানোর জন্য। ৮টার পর ওকে কোনভাবেই আমি আর আলোতে নিতাম না এবং রুমের লাইট জ্বালাতাম না। ডায়াপার চেইঞ্জ করলেও সেটা অন্ধকারে। বাবু যখন আস্তে আস্তে হাসতে শিখেছে, আমার দিকে তাকিয়ে ইন্টর্যাক্ট করতে চাইতো, আমি ওর চোখের দিকে তাকাতাম ও না। এতে করে ও দিনে আলো আর রাতে আঁধার এবং রাত হলো ঘুমানোর সময়, দিন হল খেলার সময়, এগুলো ধীরে ধীরে বুঝতে শিখেছে।
৩. বাবুর ৭দিন বয়স থেকে আমি স্ট্রিকটলি নাইট টাইম রুটিন ফলো করেছি। সন্ধ্যা ৭.৩০ টায় ওকে আমাদের স্বাভাবিক স্কিন টেম্পারেচার এর পানি দিয়ে রুমাল দিয়ে গা মুছে দিতাম। ডায়াপার- ড্রেস চেইঞ্জ করে দুধ খাইয়ে লাইট অফ করে দিতাম। এটা ছিল ওর প্রথম ৩মাসের রুটিন। এরপর শীতের সময় কুসুম গরম পানি দিয়ে মুছাতাম। এখন একটু দেরীতে ঘুমায়, তাই শরীর মুছাই ডিনারের পর, ৯.৩০ তে। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ্‌, গত ১ বছরে, একদিনের জন্য ও এই রুটিন মিস হয়নি। এতে করে বাবু বুঝে যে সন্ধ্যায় গা মুছানো, ড্রেস চেইঞ্জ মানেই আমার ঘুমের সময় হচ্ছে। আর ওরাও খুব আরাম বোধ করে তাই ভাল ঘুম হয়।
৪. কিছু ব্যাপার জানতে হবে। এগুলো নিয়ে গুগল করতে পারেন বা কমেন্ট করলে আমি সময় পেলে লিখব। যেমন বাচ্চাদের প্রথম বছরে কয়েকবার গ্রোথ স্পার্ট হয়, এসময় বাচ্চাদের ঘুমের রুটিন কয়েকবার চেইঞ্জ হয় বা একটু ডিসটার্বড হয়। সময় গুলো জেনে রাখলে মেন্টার প্রিপারেসন থাকবে। এছাড়া ৪-৫মাস বয়সে স্লিপ রিগ্রেশন হয় অনেকের, এটা একদম স্বাভাবিক।

বাচ্চাকে এখন না ঘুম পাড়ালে বা দেরী করে ঘুমালে তাড়াতাড়ি ঘুমাবে এবং লম্বা ঘুমাবে এটা একটা মারাত্মক ভুল ধারনা!!! বাচ্চা যত বেশি টায়ার্ড হবে তত ঘুমাতে রেসিস্ট করবে, কান্না করবে এবং কষ্ট পাবে।
১ বছর পর্যন্ত বাচ্চা দিনে যত ভাল ঘুমাবে (বেশি ঘুম না, টাইমলি ঘুম) সে রাত্রেও তত ভাল ঘুমাবে। সো ন্যাপ প্রোপার টাইম এ নিচ্ছে কিনা, খেয়াল করুন।
১বছরের উপরের অনেক বাচ্চাই ন্যাপ নিতে চায়না। জোর করার দরকার নাই। ফুল নাইট স্লিপ ই এনাফ।
দাঁত উঠে গেলে রাত্রে ঘুমের মধ্যে ফর্মুলা না খাওয়ানোই ভাল। দাঁত নষ্ট হয়। আর মোবাইলে হোয়াইট নয়েজ এপ নামিয়েছি। খুব কাজের জিনিস।
আজ আপাতত এটুকুই। ধন্যবাদ।

লিখেছেন-

Dr Ishrat Nazneen Metee

MBBS, MSc, PGT (Dermatology)

বাচ্চার সহজ পটি ট্রেইনিং

আমি একজন ওয়ার্কিং ফ্রম হোম মম। তাই পটি ট্রেইনিং এর স্লো ট্রানজিশন আমার জন্য সুবিধাজনক হয়েছে এবং আমি বাচ্চার ৭মাসে পটি ট্রেইনিং শুরু করেছি। তার আগ পর্যন্ত বাচ্চা চব্বিশ ঘন্টাই ডায়াপার এ অভ্যস্ত ছিল। প্রথমত পটি করার সময়টুকু বাদে দিনেরবেলা বাচ্চাকে ডায়াপার ছাড়া রেখেছি কিন্তু রাত্রে ডায়াপার পরিয়েই রাখতাম। নোটিশ করেছি যে বাবু কোন কোন সময় প্রসাব করে। ততদিনে যেহেতু বসতে শিখেছে এবং অল্প স্বল্প হামাগুড়ি দিচ্ছে, তাই বেশিরভাগ সময় তাকে ফ্লোর এ রাখা হত। ২/৩ দিনে তার প্রসাব-পায়খানার রুটিন বুঝা গেল। এরপর থেকে সময় ধরে ধরে তাকে টয়লেট এ নিয়ে প্রসাব করানোর চেষ্টা করানো হত। এভাবে যখন সে বারবার কমোড এ বসে প্রসাব করা শুরু করল, আমি আস্তে আস্তে খেয়াল করলাম পুরো রাতেও তার ডায়াপার শুকনো থাকছে। তাই দুইমাস রাতে ডায়াপার দিলেও আস্তে আস্তে এখন রাতেও ডায়াপার ছাড়া রাখছি। সকালে ৭/৮টা নাগাদ ঘুম থেকে উঠার পর সে অল্প সময়ের ব্যবধান এ বার বার প্রসাব করে ব্লাডার খালি করে নেয়।

একই সাথে তার পায়খানা করার সময় হলে আমি দৌড়ে নিয়ে কমোড এ বসিয়েছি, এখন তার পায়খানার বেগ হলে সে নিজেই বাথরুম এর দিকে হামাগুড়ি দিয়ে ভোঁ দৌড় দেয়। একটা ভাল ইনভেস্টমেন্ট হল কমোড সিট কিনেছি (আমাদের কমোডের উপর এটা ঢাকনার মত বসানো। আলাদা পটি ক্লিন করার মত সময় আমার নেই) কমোড সিট কেনার আগে আমাদের ধরে বসে থাকত বড়দের কমোড এই। সিট কেনার পর বসানোর জন্য দুইদিন হাতে পুশ শাওয়ার দিয়েছি ঘুষ হিসেবে (মুনাটিক এর মত বলতে হয়, বাঙালী বাচ্চা ঘুষ তো খাবেই 😛 ) এখন খুব সুন্দর বসে থাকে, কোন সমস্যা হয়না।

আমি ৬মাস শুরু হবার পর পটি ট্রেইনিং এ মনযোগ দিয়েছি তার কারণ, বাচ্চা বসতে শেখার আগে তাকে নিয়ে কমোড এ বারবার কষ্ট করবার আমি কোন মানে দেখিনা। একই সাথে বাচ্চা ১বছরের বেশি হয়ে গেলে তার অপিনিয়ন আরো জোড়ালো হয়। তখন তার মর্জি না হলে তাকে অভ্যস্ত করাটা আমার মনে হয়েছে একটু কঠিন হতে পারে। তবে মনে রাখবেন, পটি ট্রেইনিং এর কোন পারফেক্ট বয়স নেই, এভারেজ বয়স ২.৫ বছর। কেউ আগে করে কেউ পরে। এগুলো নিয়ে স্ট্রেসড হবার কিছু নেই।

লিখেছেন-

Dr Ishrat Nazneen Metee

MBBS, MSc, PGT (Dermatology)